শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫ - ০৮:৪৩
১২ দিনের যুদ্ধ: জাতীয় ঐক্যের এক অলৌকিক অধ্যায় ও শক্তিশালী ইরানের অভ্যুদয়

ইরানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন আখলাকি আমিরি বলেছেন, ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে ইরানি জাতির মধ্যে যে একতা ও সংহতি তৈরি হয়েছিল, তা ছিল এক অলৌকিক ঐশ্বরিক রহমত। তিনি বলেন, “শত্রুরা ভেবেছিল ইরানি জনগণ বিভ্রান্ত, কিন্তু জনগণ সম্পূর্ণ শক্তি ও আস্থার সঙ্গে রাষ্ট্র ও নেতৃত্বের পাশে দাঁড়িয়ে এক নতুন জাতীয় শক্তির প্রতিচ্ছবি উপস্থাপন করেছে।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন আখলাকি আমিরি’র বক্তব্যের সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ:

নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা ও ঐক্যবদ্ধ জাতি
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী  যুদ্ধোত্তর ভাষণে বলেন, “শত্রুর পরিকল্পনা ছিল নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কৌশলগত কেন্দ্রগুলোর ওপর আঘাত হেনে সরকারকে দুর্বল করা। এরপর নানা বিদ্রোহী ও বিভ্রান্ত গোষ্ঠীকে উসকে দিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করা। কিন্তু ইরানি জাতি সকল রাজনৈতিক মত ও ধর্মীয় ভিন্নতা উপেক্ষা করে ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে রুখে দাঁড়িয়েছে।”

ঈশ্বরীয় অনুগ্রহে গড়ে ওঠা সংহতি
আখলাকি আমিরি কোরআনের সূরা আনফালের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “যদি তুমি পৃথিবীর সবকিছু ব্যয় করতে, তবুও মানুষের হৃদয় এক করতে পারতে না; আল্লাহই তা করেন।” তিনি বলেন, “এই সংহতি আল্লাহর লুকায়িত রহমত, যা জাতিকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে—নারী, পুরুষ, তরুণ, প্রবীণ সবাই জাতীয় নেতৃত্বের পেছনে একতাবদ্ধ হয়েছে।”

ঐক্য রক্ষায় দায়িত্বশীলতা অপরিহার্য
তিনি বলেন, “এই ঐক্য রক্ষা করতে হলে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও অহংকার পরিহার করে ইসলামী ও জাতীয় মূল্যবোধের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এখন ব্যক্তিগত বা দলীয় প্রতিশোধের সময় নয়। গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের ভাষা ও আচরণে সংযম থাকা দরকার।”

জনগণের ত্যাগের স্বীকৃতি ও সরকারি দায়িত্ব
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই জাতি কোনো দ্বিধা ছাড়াই দেশের পক্ষে ও নেতৃত্বের পাশে দাঁড়িয়েছে। অথচ শত্রু চেয়েছিল মূল্যবৃদ্ধি ও চাপের মাধ্যমে জনগণের মনোবল ভেঙে দিতে। সরকারের উচিত এই ঐক্যের মর্যাদা রক্ষা করা এবং জনগণের ভরসাকে দুর্বল হতে না দেওয়া।”

এক শক্তিশালী ইরানের জন্ম
এখলাকি আমিরি বলেন, “এই যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে যে ৯০ মিলিয়নেরও বেশি ইরানি জনগণ ইসলামী প্রজাতন্ত্রের মূল শক্তি। এই সংহতি কোনো দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ৪৭ বছর পর এমন সর্বজনীন ঐক্য এক অলৌকিক ঘটনা।”

তিনি বলেন, “আমরা আশঙ্কা করছিলাম যে জনগণের আস্থা কমে গেছে, বিশেষ করে নির্বাচনে কম অংশগ্রহণ দেখে। কিন্তু এই যুদ্ধ প্রমাণ করেছে, জনগণ ইসলাম, দেশ ও জাতীয় মর্যাদার প্রশ্নে কখনো পিছু হটে না। শত্রুরা আবারও ভুল হিসাব করেছে।”

গভীর সংস্কার দরকার
তিনি বলেন, “পূর্বের কিছু শাসনিক নীতিতে জনগণের প্রতি অবিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু আজকের ইরানি সমাজ প্রজ্ঞাবান ও সচেতন। জনগণের উপর আস্থা রাখতে হবে। আস্থা দিলে তারা সহযোগিতার মাধ্যমে তার প্রতিদান দেবে।”

সামরিক সক্ষমতা ও প্রযুক্তিতে উৎকর্ষতা
তিনি জানান, “যদিও যুদ্ধের শুরুতে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিলাম, কিন্তু ইরান ‘রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ ও বুদ্ধিদীপ্ত সামরিক পরিকল্পনায় আজ বিশ্বে অন্যতম। ১২ দিনের যুদ্ধে আমাদের সামরিক সম্পদের খুবই অল্প অংশ ব্যবহৃত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আজকের যুদ্ধ অতীতের মতো নয়। ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে নতুন যুদ্ধপদ্ধতি তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘বাশারাতে ফাতহ’ অভিযানের সময় কাতারকে জানানো হয়েছিল আঘাত কোথায় আসবে—কিন্তু ভবিষ্যতে আর জানানো হবে না। এতে শত্রু বিভ্রান্ত থাকবে।”

কূটনীতিতে শক্তির অবস্থান
তিনি বলেন, “যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন উপলব্ধি করছে যে ইরানের সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তি বাস্তব ও কার্যকর। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করছে।”

তিনি আরও জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যে ইরান নির্ধারিত যেকোনো স্থানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। এটি ইরানের শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ারই ইঙ্গিত এবং তাদের অসহায়তার প্রকাশ।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha